বংশী নদীর দূষণে কৃষিকাজে ব্যাঘাত

Spread the love


অনলাইন ডেস্ক॥

সাভার ও ধামরাই এলাকায় বয়ে যাওয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী বংশী নদী। সাধারণত নদী পারের মানুষের পেশা অনেকটাই নদীকেন্দ্রিক হয়। বংশী নদী পারের এলাকা একসময় কৃষির কেন্দ্র থাকলেও তীব্র দূষণের কারণে এখন আর নদীর ওপর নির্ভর করে মানুষেরা আদি পেশায় টিকে থাকতে পারছে না। আঞ্চলিকভাবে ‘বংশাই’ নামে পরিচিত এই নদী ধামরাইয়ের নয়ারহাট- সাভার হয়ে আমিনবাজারে তুরাগ নদীতে পতিত হয়েছে।
সাভারের অধিকাংশ কারখানাগুলো বংশী নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠেছে। এই কারখানাগুলোর বর্জ্য সরাসরি নদীর পানিতে ফেলা হয়। এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে ও আশেপাশের আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। ধামরাইয়ের নয়ারহাট বাজার দিয়ে ইপিজেড এলাকা পর্যন্ত পানির রং কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত। তবে সাভার থানারোডের দিকের নদীর পানির রং কিছুটা স্বাভাবিক এবং এখানে বেশ কিছু মাছও পাওয়া যায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজিপুর এলাকার কারখানাগুলো কেন্দ্রীয় তরল বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) ব্যবহার না করে সরাসরি নদীতে ফেলছে। আবার রাজফুলবাড়িয়ার তেঁতুলঝোরা এলাকার চামড়া কারখানা থেকে নদীতে সারারাত অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা হয়।
এতে করে নদীর পানি কৃষিকাজে আর ব্যবহার করা যাচ্ছেনা। আগে নদী থেকে আশেপাশের আবাদ জমিগুলোতে সেচ দেওয়া হতো। নদী দূষণের ফলে নদীর পানি তো জমিতে ব্যবহার করা যাচ্ছেইনা, বরং এই বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে আশেপাশের কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। ধামসোনা, শিমুলিয়ায় বোরো চাষ অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এসব এলাকায় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর মাটিও দূষিত হয়ে পড়ছে এই নদী দূষণের কারণে। এসব গ্রামে বাড়িতেগুলোতে লাগানো বিভিন্ন ফল ও সবজিতে আগের মতো স্বাদ নেই। মাটি থেকে পুষ্টির পরিবর্তে গাছগুলো শোষণ করছে দূষিত পদার্থ। এতে ফল, সবজিও বেস্বাদ হয়ে পড়েছে।

এসব এলাকায় সারাবছর নদীর পানি কালো থাকলেও বর্ষায় পানি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে তা বেশিদিন থাকে না। এসব এলাকায় বর্ষার কিছুদিন ছাড়া সারা বছর কোনো মাছ পাওয়া যায়না। শীতকালে নদীতে পানির চেয়ে রাসায়নিক বর্জ্যের পরিমাণ বেশি থাকায় মাছ মারা যায়। তবে দূষণের আগে এই নদীতে সারাবছর বিভিন্ন দেশি মাছ পাওয়া যেত।
নয়ারহাট এলাকার বেলায়েত মাঝি বলেন, ‘এক সময় এই নদীর মাছ খাইতে যশোর থেকে লোক আসতো, এতই সুস্বাদু ছিল এই নদীর মাছ। আর এখন এই নদীতে স্রোতও নাই, মাছও নাই।’
পাথালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মিয়া বলেন, ‘নদীর অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হয়ে যাচ্ছে। ১৫-২০ বছর আগেও এই নদীতে নৌকায় করে সারাবছর মাছ ধরছি। এই নদীতে মানুষ নেমে গোসলও করতো। আমরা কৃষি কাজেও ব্যবহার করতাম এই পানি। আর এখন নাকে হাত চেপে নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া লাগে এতটাই দুর্গন্ধযুক্ত এই পানি।’
একই গ্রামের বালু ব্যবসায়ী আবদুল বারেক জানান, ‘নদীতে বিষাক্ত রাসায়নিক ফেলা হয় ইপিজেড, আশুলিয়া এলাকা থেকে। এখন মাটি এতটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে যে আশেপাশের এলাকার ফল ও সবজির স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে। নদীর আশেপাশে কৃষিজমি তো তেমন নাই-ই।’ সূত্র: ইত্তেফাক।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours