সোনালী কাবিন বাংলা সাহিত্যের অপরিহার্য অংশ

Spread the love

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাহিত্যপ্রেমিদের মিলনমেলা- মঙ্গল সাহিত্য আড্ডার ৬৩তম পর্বে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গৌরব সোনালি কাবিনের কবি আল মাহমুদ: বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদান’ শীর্ষক এক উন্মুক্ত সেমিনার আয়োজন করে অদ্বৈত মল্লবর্মণ স্মৃতি গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র। শহরের টেংকের পাড়স্থ পৌর কমিউনিটি সেন্টারে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত সাড়ে নটা পর্যন্ত চলে এই মুক্ত আলোচনা। বিশিষ্ট কবি ও গবেষক ড. শাহ মোহাম্মদ সানাউল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি ও আল মাহমুদ গবেষক অধ্যাপক মহিবুর রহিম। কবি এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন, দেশ বরেণ্য কবি ও কথাশিল্পী রফিকুর রশীদ, অধ্যাপক মান বর্দ্ধন পাল, কবি ও গীতিকার আব্দুর রহিম, অধ্যাপক কবি মুসলেম উদ্দিন সাগর, কবি ও গবেষক মানিক রতন শর্মা, কবি শৌমিক ছাত্তার, কবি ও সাংবাদিক সাহিদুল ইসলাম স্বপন, কবি আমির হোসেন, কবি কাজী বর্নাঢ্য, কবি রোকেয়া রহমান, কবি শাহজাদা জালাল, রম্যলেখক পরিমল ভৌমিক প্রমুখ। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, জামিনুর রহমান, ফারুক আহমেদ ভুঁইয়া, শাদমান শাহিদ, মাসুদুর রহমান, রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস, গোলাম মোস্তফা, শাহীন আল মামুন, ইউনুস সরকার প্রমুখ।
সভায় মূল আলোচনায় কবি অধ্যাপক মহিবুর রহিম বলেন, যে কয়েকজন কালজয়ী প্রতিভা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুনাম সুখ্যাতি বাড়িয়েছেন কবি আল মাহমুদ তাদের অন্যতম। আল মাহমুদ ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি একাধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার, শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে তিনি আধুনিক বাংলা কবিতাকে নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক ভঙ্গীতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মাত্র দু’টি কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ১৯৬৮ সালে বাংলা একাডেমি পদক লাভ করেন। এটা একটা দুর্লভ স্বীকৃতি। ১৯৭৩ সালে তাঁর সোনালি কাবিন প্রকাশিত হলে তাঁর কবিখ্যাতি আরও ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। কবিতার পাশাপাশি কবি আল মাহমুদ কথাসাহিত্যেও যুগান্তকারী ভূমিকা রাখেন। তাঁর সাহিত্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নানা অনুষঙ্গ অনবদ্য শিল্প নৈপুণ্যে ওঠে এসেছে।
আলোচকগণ আরও বলেন, আল মাহমুদ বাংলা ভাষার একজন শ্রেষ্ঠ কবি । তাঁর অমর কীর্তি সোনালি কাবিন বিদেশি ভাষায় অনুদিত হোক। বিশ্ববাসী জানুক বাংলা সাহিত্যে একজন কালজয়ী কবি আছেন, যাকে পাঠ করলে সত্যিকারের সাহিত্যের স্বাদ পাওয়া যায়। বক্তারা বলেন, আল মাহমুদ যা সৃষ্টি করছেন, তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যদিও আমরা জানি বিশ্বসাহিত্যে এমন অনেক লেখক আছেন যারা জীবিত অবস্থায় মূল্যায়ন পাননি, কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর তারা বরণীয় স্মরণীয় হয়েছেন। আল মাহমুদের বেলায়ও তাই হয়েছে। বক্তারা বলেন, মহৎ লেখকরা নানা কারণে অবহেলিত হন। কিন্তু একটা সময়ের পরে তারা ঠিকই কালের মূল্যায়ণে স্বীকৃত হন। এটা সময় নির্ধারণ করে সেই লেখক সত্তাকে মহাকাল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারা বলেন, আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে একটা পৃথক কাব্যধারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে তিনি যে পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তা বিশ্বসাহিত্যে তাঁকে আসন করে দিয়েছে।
বক্তাদের মতে, সোনালি কাবিনের পর আল মাহমুদের অন্য কোনো সাহিত্যকর্ম প্রকাশিত না হলেও আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যের প্রথম শ্রেণির কবিদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকতেন। বিশেষ করে বাংলা কবিতায় লোকজ উপাদানকে অনুসঙ্গ হিসেবে নিয়ে কাব্যিক ভাষা সাজিয়েছেন নতুন আঙ্গিকে। গ্রামীণ বাংলার জনজীবনকে রূপ, রস আর গন্ধে নানান উপমা উৎপ্রেক্ষার মাধ্যমে চমৎকার রূপে সাজিয়েছেন সোনালী কাবিনের প্রতিটি পাতা। সোনালী কাবিনে পুরো বাংলাদেশের কাব্যিক সুসংবাদের পাশাপাশি অসঙ্গতির বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছেন সাহসী বক্তব্য, সুন্দরের স্বপ্ন বিনির্মাণ করেছেন নান্দনিক ভাষায়, স্বপ্নভঙ্গের মনোবেদনা প্রকাশ করেছেন শব্দের দীর্ঘশ্বাসে, নারীকে এঁকেছেন স্বচ্ছ কাঁচের পারদে, কামভাব প্রকাশ করেছেন সাবলীলভাবে এবং প্রতিটি কবিতায় শব্দের খেলা করেছেন একজন দক্ষ শব্দযাদুকরের মতো করে। মাত্র ৪১টি কবিতায় সাজানো সোনালি কাবিন কাব্যগ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বক্তারা বলেন, সোনালি কাবিন একটি অলৌকিক গ্রন্থের মতো। এর প্রয়োজনীয়তা হাজার বছরেও ফুরাবে না।
তাঁর স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, তার কাব্য ধারায় এক অনন্য মাত্রা এনে দিয়েছে, যা তাকে করেছে স্বতন্ত্র। তিনি মহান যুগের মহান প্রতিনিধি। বক্তারা আল মাহমুদকে পড়ে, জেনে তাকে নিয়ে বেশি বেশি গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours