হারিয়ে যাচ্ছে বিয়ের গীত

Spread the love

রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস ॥

ছেলেমেয়ের বিয়ে হবে আর গীত হবে না,এমনটি ভাবাই যেত না একসময়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্রামীণ জনপদের সর্বত্র এই ছিল প্রচলিত রীতি। গায়ে হলুদ থেকে শুরু হতো এই গীত। গীতে গীতে বিয়ে বাড়ি হয়ে উঠত আনন্দময়। সেই আনন্দ এখন আর চোখে পড়ে না। গীতের স্থান দখল করেছে আধুনিক নাচ গান। বাজানো হচ্ছে ঝাকানাকা গান। অথচ একসময় গ্রামের বয়স্করা বংশানুক্রমে এই গীত পরিবেশন করে বিয়ের আনন্দ উপভোগ করতেন। মুখে মুখে প্রচলিত এবং কখনও কখনও তাৎক্ষণিকভাবেও রচিত এ গানগুলো আমাদের লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য ভান্ডার হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে।
এই গীত গাওয়ার জন্য প্রায় প্রতি গ্রামেই একাধিক দল থাকতো। কারো বাড়িতে বিয়ে হলে তাদেরকে সম্মানের সাথে দাওয়াত করে নেওয়া হতো। কারণ ওই সময় বিয়ে বাড়ির বিশেষ এক অলঙ্কার ছিলো ওইসব গীত পরিবেশনকারীরা।
বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা থেকে কনে বিদায় দেওয়া পর্যন্ত কনের বাড়িতে গীত গাওয়ানো হতো। বরের বাড়িতে গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে পরের দিন বৌভাত পর্যন্ত বিয়ের গীত চলতো। বরের বাড়িতে বউ নিয়ে আসার পরের দিন ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ, নারীসহ অনেকে বিয়ের গীত ও রংমাখা, কালি মাখাসহ নাচগান করে আনন্দে মেতে উঠেন। আমাদের এই অঞ্চলের অনেক মুরুব্বীরা এখনো সে গুলো বেশ যত্ন নিয়েই আগলে রেখেছেন।
সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের রাশেদা বেগম বলেন, আমাদের সময় গীত ছাড়া বিয়ে বাড়ির কথা কল্পনাই করা যায় না। তিনি জানান, আমি নিজেও অনেকেরে বিয়ের অনুষ্ঠানে গীত পরিবেশন করেছি। আধুনিকতার দাপটে গ্রামের বিয়ের গীত গাওয়ার প্রথা প্রায় উঠে যাচ্ছে-এমন বিষয়ে বেশ আক্ষেপ করলেন মেড্ডা গ্রামের সফিক মিয়া। তিনি বলেন, এক সময় এই গীত ছাড়া গ্রামে বিয়ের কথা ভাবাই যেত না। তিনি জানান, তার গলা অনেকটাই মেয়েলি টাইপের ছিলো। আর এই সুযোগে তার বড় বোনেরা তাকে দলে নিতো গীত পরিবেশন করার জন্য। তিনি জানান, গীত হচ্ছে, জারি গানের প্রায় কাছাকাছি। পরবর্তী সময়ে হিজড়ারা নিজেদের ঢংয়ে এসব গীত গাইতে থাকেন। বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠানে মানুষ এখন গ্রামীণ প্রচলন ভুলে যাচ্ছে। জেলার কিছু এলাকায় এখনো প্রচলন রয়েছে বিয়ের গীত ও বরকনে খেলা। তবে তা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
এবিষয়ে কবি ও কথাসাহিত্যক শৌমিক ছাত্তার বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বিয়ের গীত কি জিনিস, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা থাকবে না। তারা শুধু বাবা, মা, দাদা-দাদির কাছে গল্প শুনে জানবে বিয়ের গীতের কথা।
অধ্যক্ষ সোপানুল ইসলাম বলেন, মাটি ও মানুষের জীবন, তাদের সুখ দুঃখ আনন্দ বেদনা এসবই ছিলো আমাদের বিয়ের গীতের মূল উপজীব্য বিষয়। এগুলো বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ এবং তা পুস্তক আকারে লিপিবদ্ধ করে রাখা আমাদের দায়িত্ব।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours