মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবিতে রণক্ষেত্র কলকাতা

Spread the love


ডেস্ক:

আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ এবং রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগ দাবিতে রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্ন’ অভিযান ঘিরে মঙ্গলবার রীতিমত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় কলকাতা। শিক্ষার্থীদের ডাকা এই কর্মসূচিতে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হন পুলিশ ও আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচির আগেই অন্তত চার শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছেন। এদিকে ছাত্র সমাজের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যব্যাপী ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার থেকে তারা ধরনায় বসবে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খবর আনন্দবাজার ও পিটিআই অনলাইনের।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয় নবান্ন অভিযানের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা। তবে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের অভিযোগ, ছাত্রদের নামে এই অভিযান করছে বিজেপি ও আরএসএস। বিজেপি শিবিরের দাবি, ছাত্রদের এই নবান্ন অভিযানকে তারা সমর্থন করেছে মাত্র। তবে মাঠের চিত্র বলছে, এদিন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলা থেকে বিজেপি ও আরএসএসের কর্মী-সমর্থকরা নবান্ন অভিযানের উদ্দেশে কলকাতায় জড়ো হন। মঙ্গলবার দুপুর একটা থেকে শুরু হয় নবান্ন অভিযানের মিছিল। কলকাতার দিক থেকে নবান্নে যাওয়ার দ্বিতীয় হুগলী সেতু ও হাওড়া ব্রিজের মুখে ওঠার রাস্তায় কয়েক দফায় শক্ত ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। জলকামান, টিয়ারশেল ও লাঠি হাতে একাধিক স্তরে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
অন্যদিকে গঙ্গার অপরপাড়ে হাওড়ায় নবান্নে যাওয়ার সাঁতরাগাছি রোডে ঢোকার মুখে নবান্ন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ১০ ফুট উঁচু কয়েকটি ব্যারিকেড দেয় পুলিশ। মহাত্মা গান্ধী সড়ক, কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুল, সাঁতরাগাছি, হাওড়া সেতুতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভের মুখে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সড়কে যান চলাচলে বিঘœ ঘটায় সবাই মেট্রোতে করে গন্তব্যে ছোটার চেষ্টা করেন।
এদিন দুপুর একটা নাগাদ আন্দোলনকারীরা গঙ্গার দুইপাড়ে নবান্নে ঢোকার ব্যারিকেডের ওপর হামলে পড়ে। ভাঙা হয় প্রথম স্তরের পুলিশের বাধা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তখন জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এক ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। দুপুর দুটোর পর শেষ হয় জলকামানের পানি। পুলিশ লাঠি হাতে ছত্রভঙ্গ করতে এগোতেই শুরু হয় ফের সংঘর্ষ। কলকাতায় যারা বিভিন্ন কাজে এসেছিলেন এই গ-গোলের জেরে তারাও পড়েন বিপাকে।
চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দশই আগস্ট থেকে টানা এই আন্দোলন এবং নবান্ন অভিযান ঘিরে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে খ- যুদ্ধের ঘটনা কলকাতার ইতিহাসে এই প্রথম। নবান্ন অভিযানের আগেই অবশ্য মমতা ব্যানার্জি তার অফিসে আসেন। আরজি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে বেশ কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর পর এটি মমতার পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়।
‘দফা এক দাবি এক, মমতার পদত্যাগ’ প্ল্যাকার্ডে এমন স্লোগান লিখে রাস্তায় নেমেছেন তারা। বিজেপির ডাকা বাংলা বনধ পালন করতে নিষেধ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। জনগণের উদ্দেশে রাজ্য সরকার বলেছে, তারা যেন বনধ পালন না করেন। জনজীবন যেন স্বাভাবিক রাখেন। দুর্গা পূজার বিকিকিনি চলছে যে সমস্ত দোকান-বাজারে, তা যেন খোলা রাখা হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সমস্ত পরিবহনের স্বাভাবিক চলাচল বজায় রাখার জন্য সব ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানান, ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদেই ওই বনধ পালন করা হবে। সেই ঘোষণার আধ ঘণ্টার মধ্যেই নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে সরকারি ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার উপদেষ্টা আলাপন ব্যানার্জি।
এদিকে নবান্ন অভিযানের আগে, মধ্যরাতের পর হাওড়া স্টেশন থেকে চার ছাত্র নিখোঁজ হয়েছেন। আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তাদের পরিবার। নিখোঁজ চার ছাত্র হলেনÑ শুভজিৎ ঘোষ, পুলকেশ প-িত, গৌতম সেনাপতি ও প্রীতম সরকার। পুলিশ এই চার ছাত্রকে আটক করেছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন বিচারপতি ভরদ্বাজ। বুধবার এই মামলার শুনানি।
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, হাওড়ায় স্বেচ্ছাসেবকদের ফুড প্যাকেট বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন এই চার জন। হঠাৎ করে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফোনেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। অবশ্য পরে এই চার ছাত্রকে আটকের কথা স্বীকার করেছে পুলিশ। এর আগে ভারতজুড়ে চিকিৎসকরা ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন। এতে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা চরম বিপাকে পড়েন। দেশটির চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সংস্থা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনও (আইএমএ) আন্দোলনে সম্মতি দেয়। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নামিদামি হাসপাতালে এই কর্মবিরতির প্রভাব পড়ে।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours