ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চাঁদা দাবির অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা: অপসারণ দাবি

Spread the love


ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে মোহাম্মদ ইদ্রিস॥
৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাস্টমস এক্সাইজ, ভ্যাট ও উপ-কর কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে মো. রাশেদুল হক নামে এক রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১২ জুন উপ-কর কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ তার কার্যালয়ে যাওয়ার জন্যে রেস্টুরেন্ট মালিক মো. রাশেদুল হককে খবর দেন। এ সময় হোটেল মালিক তার ম্যানেজার মো. নূরুল আমিনকে সেখানে পাঠান। পরে ম্যানেজারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। অন্যথায় মামলা মোকদ্দমা করে ব্যবসা করতে দেবেন না বলে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে টাকার ব্যবস্থা করার কথা বলে চলে যান নোওমী রেস্টুরেন্টের ওই ম্যানেজার।
পরে হোটেল ব্যবসায়ী মো. রাশেদুল হক তার সঙ্গে দেখা না করায় সোমবার (২৪ জুন) রাত পৌনে ১২টার দিকে নোওমী রেস্টুরেন্টে যান উপ-কর কমিশনারসহ তার ১০ থেকে ১২ জন স্টাফ। পরে হোটেল মালিককে খোঁজতে থাকেন তিনি। পরে রেস্টুরেন্ট মালিককে ডেকে নিয়ে আসেন। এ সময় রেস্টুরেন্ট মালিক এতরাতে অভিযান সম্পর্কে কাস্টমস কর্মকর্তার কাছে জানতে চান। এ সময় আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ আবারও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, অন্যথায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করাসহ দোকান বিক্রি করতে বাধ্য করবেন বলে হুমকি দেন। পরে ঘটনা বেগতিক দেখে হোটেল মালিক তার ছোটভাই ও মামলার ১নং সাক্ষী অ্যাডভোকেট মো. আরিফুল হক মাসুদকে খবর দেন।
পরে অ্যাড. মাসুদ এসে কাস্টসম কর্মকর্তাকে ৫ লাখ টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর উপ-করকমিশনার উত্তেজিত হয়ে তার সঙ্গে থাকা স্টাফদের নিয়ে গালমন্দ করে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেন। পরবর্তীতে পথচারীরা এসে রেস্টুরন্টের সামনে জড়ো হলে আহাদ রাগান্বিত হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর রাতের ওই ঘটনার ২৪ জুন দুপুরে প্রতিকার চেয়ে রেস্টুরেন্ট মালিক মো. রাশেদুল হক আদালতের কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কাস্টমস এক্সাইজ, ভ্যাটের উপ-কর কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আরিফুল হক মাসুদ জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর আমলি) আদালতের বিচারক মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে শহরের মসজিদ রোডের দি ঝুমুর রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা সরকারকে ট্যাক্স ভ্যাট দিয়েই ব্যবসা করি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এর আগে অনেক উপ-কর কমিশনার ছিলেন। কিন্তু বর্তমান যে, উপ-কর কমিশনার আছেন তার মতো এমন বাজে কর্মকর্তা আমরা আর দেখিনি। তিনি মানুষের সঙ্গে কুকুর বিড়ালের মতন আচরণ করেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে জোর করেই মানুষকে তিনি কর দেয়ার জন্যে এক ধরনের হয়রানি করছেন। জোর করে কর নয়, চাঁদা আদায় করা যায়। আমরা দ্রুত তার অপসারণ চাই। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। অপরদিকে জেলা রেঁস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক মো. ফখরুল হাসান জানান, তার অত্যাচার এবং নির্যাতনের বিষয় নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমরা ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ দেখা করেছি। আমাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো উনার কাছে বলেছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি মো. শাহ আলম জানান, উপ-কর কমিশনার একজন বিসিএস ক্যাডার। প্রশাসনের কর্মকর্তার এমন বর্বর আচরণ করতে পারেন, সেটা ভাবা যায় না। তিনি ব্যবসায়ীদের মানুষ মনে করেন না। ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এমনটা হলে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে কীভাবে? এ দিকে কাস্টমস এক্সাইজ, ভ্যাট দায়িত্ব থাকা উপ-কর কমিশনার আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। তিনি জানান, নোওমী রেস্টুরেন্টের মালিক রাশেদুল হকের সঙ্গে সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম দেখা হয়। পরে রাত ১২টার দিকে আরেক বার দেখা। আমরা পুরো টিম কাজ করছিলাম। মূলত রেস্টুরেন্টের মালিক রাশেদুল হকেরা মূসক ৬ এর (৩) চালান ইস্যু না করে ব্যবসা বাণিজ্য করে আসছেন। মূসক ফাঁকি দিচ্ছেন নিয়মিত। হাজারো কাস্টমারদের মূসক ছাড়াই রশিদ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যায় আমরা গিয়েছিলাম রাঁধুনি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে, পরে আল আরাফাতে এরপর নোওমী, গ্রিনচিলিতে। নোওমীতে সন্ধ্যায় যখন গিয়েছিলাম, তখন তারা কাস্টমার ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। কাস্টমার ছাড়াতো মূসক চালানের কপি পাওয়া যাবে না। আমরা কাস্টমারের কাছ থেকে বক্তব্য নিচ্ছিলাম। প্রত্যেকটি বক্তব্যের প্রেক্ষিতে একটি করে মামলা হয়। এক একটি মামলার জরিমানা হওয়ার কথা ১০ হাজার টাকা। আমাদের জুন মাস চলছে। শেষ সময় চলছে। আবু হানিফ মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ওই রেস্টুরেন্টে কাস্টমারের বক্তব্য নেয়ার সময় হঠাৎ করে হোটেল মালিক এসে আমাদের বলেন, আপনারা কি আমাদের ব্যবসা করতে দেবেন না। ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন। এক পর্যায়ে আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরে আমরা বের হয়ে আসি। তারা যে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে তা প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি আরও জানান, সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী আমার বিরুদ্ধে আমাদের অথরিটির অনুমোদন ছাড়া মামলা নেয়ার কথা না। মামলা যদি আদালত নিয়ে থাকেন, সেটি হয়তো আদালতের এখতিয়ার আছে।
এ দিকে বুধবার (২৬ জুন) বেলা ১১টার দিকে কাস্টম কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং ব্যবসায়ীদের হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। মানববন্ধনে উপ-কর কমিশনারের অপসারণসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হবে বলে জানান ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য, এর আগেও ওই কর্মকর্তা ফেনীতে থাকার সময় সেখানকার ব্যবসায়ীরাও তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours