এক মাস: ভেঙে গেলো রাজকীয় বিয়ে

Spread the love

অনলাইন ডেস্ক॥

ধনীর পুত্র দেখে বাবা-মা অনেক আশা করেই বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়েও হয়েছিলো প্রচুর টাকা ব্যয় করে রাজকীয়ভাবে। কিন্তু বখে যাওয়া মেয়ে জামাই যে বাসর রাতে বউকে ফেলেই নেশার টানে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে অন্যত্র রাত্রিযাপন করবেন তাতো আর কল্পনাতেও ছিল না! শুধু কি তাই? স্ত্রীকে জোর করে মদ পান করাতেও চলতো নানা চেষ্টা! আর এতেই ক্ষুব্ধ স্ত্রী। বললেন- এই স্বামীর সঙ্গে সংসার করা আর চলে না।
মাদকাসক্ত স্বামীর বাসা থেকে উদ্ধারের পর বাবার বাড়িতে এসে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন প্রিয়ন্তী। ফরিদপুরের ভাঙ্গা পৌর সদরের চৌধুরীকান্দা গ্রামে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এ সময় প্রিয়ন্তী তার বরের নানা অনৈতিক আচরণ ও বিকৃত মানসিকতার তথ্য তুলে ধরেন।
ফুটপাতে সামান্য হলুদ-মরিচের ব্যবসায়ী কুমারেশ সাহার এক ছেলে এক মেয়ের একজন এই প্রিয়ন্তী সাহা। ভাঙ্গা কেএম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী তিনি। তার রুপলাবণ্যে বিমোহিত হয়ে পারিবারিকভাবেই তাকে বিয়ে করেন ভাঙ্গা বাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি রবিন সাহার ছেলে দ্বীপ সাহা।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সনাতনপ্রথার রীতি অনুযায়ী জাঁকজমক আয়োজনে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো নজরকাড়া। বিয়ের বাজার করা হয় সিঙ্গাপুর থেকে। আর এ বিয়েতে স্বর্ণালঙ্কারই দেয়া হয়েছে প্রায় দুইশো ভরি। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলে ধুম ধাম রাজকীয়ভাবে আয়োজন। বিয়ে অনুষ্ঠানে খরচ করা হয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকার উপরে। স্থানীয় রাজনীতিবীদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হোমড়াচোমরা বাদ পড়েনি কেউ বিয়ের নিমন্ত্রণে। কিন্তু নতুন জীবনে সুখের সংসার গড়ার সব আয়োজন যেনো ভেঙে খান খান হয়ে যায় বাসর রাতেই।
প্রিয়ন্তী বলেন, বাসর রাতেই নেশায় আসক্ত হয়ে স্বামী দ্বীপ আমাকে একা ঘরে ফেলে বেরিয়ে যায়। ফিরে আসে ভোররাতে। সেই রাতেই আমি তার চরিত্রের গোপন দিকটি দেখতে পাই। এরপর সে যেনো আরো ভয়ংকর হয়ে উঠে। আমি তার স্ত্রী নই যেনো নেশার আসক্তি পূরণের রক্ষিতা! আমাকে দিয়ে সে জোর জোর করে মদ পান করানোর চেষ্টা চালায়। আমি তাতে বাঁধ সাধলে শুরু করে নির্যাতন। শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। আমাকে টয়লেটে আটকে শাস্তি দিতো সে।
বিষয়টি বাবা-মাকে জানানোর পরে ৩১ মার্চ পুলিশ দ্বীপের বাড়ি থেকে প্রিয়ন্তীকে উদ্ধার করে।
প্রিয়ন্তী বলেন, কিন্তু তারপরে সে জঘন্যভাবে আরো ক্ষিপ্র হয়ে উঠে। আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড বদলে বিভিন্ন অন্তরঙ্গ মুহূর্তের এবং জোর করে তোলা কুরুচিপূর্ণ নানা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে ছেড়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চালায়।
১ এপ্রিল প্রিয়ন্তীদের বাবার বাড়িতে হামলা চালায় দ্বীপ। খবর পেয়ে তাকে আটক করে। এসময় তার কাছ থেকে চার বোতল ফেনসিডিলও উদ্ধার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।
প্রিয়ন্তীর মা শিখা সাহা বলেন, আমার মেয়ে প্রিয়ন্তী এই বিয়েতে সম্মত ছিল না। তাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে অনুরোধ করে রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলেটা যে এমন মাদকাসক্ত তা জানা ছিল না। এই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের দেবীর মতো মেয়ের জীবনটাই বিপন্ন করে ফেলেছি।
তিনি বলেন, দ্বীপ এখন আমাদের পরিবারকে অনেক ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। বলছে গুলি করে মারবে, নইলে এসিড নিক্ষেপ করবে। আমরা এখন পরিবারপরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা এ ব্যাপারে আইনগত প্রতিকার লাভের জন্য ভাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়রি করবো।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ওসি মামুন আল রশিদ বলেন, দীপের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে দিয়ে মদ পান করানো ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে স্ত্রীকে জোর করানোর ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। এরইমধ্যে আমরা প্রিয়ন্তীকে উদ্ধার করে তার বাবা মায়ের হাতে সোপর্দ করেছি। এরপরেও যদি দ্বীপ কিছু করে তাহলে আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours