মোহাম্মদ ইদ্রিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে প্রথমবারের মতো পুর্ণ মন্ত্রী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক একান্ত সচিব, যুদ্ধাহত বীরমুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি।
তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদ্য নির্বাচিত হয়েছেন। উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি মন্ত্রী সভায় ঠাঁই পাওয়ার খবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক হিসেব বদলে গেছে। নতুন এক স্বস্তির বাতাস বইছে পুরো জেলা জুড়ে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গণমানুষের নেতা র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপিকে মন্ত্রী সভায় স্থান দেয়ায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
মোকতাদির চৌধুরীকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর আশা-আকাঙ্খা পুরন করেছেন। মোকতাদির চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-আসন থেকে প্রথমবারের মতো পুর্নমন্ত্রী হলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সামগ্রিক উন্নয়নে কাজ করবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি মন্ত্রী হবেন বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা চলছিলো।
র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩-(সদর-বিজয়নগর) আসনে (নৌকা প্রতিক) ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও (কাঁচি প্রতিক) পান ৬৪ হাজার ৩৭ ভোট।
জানা যায়- র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মোঃ আবদুর রউফ চৌধুরী, মাতার নাম মোসাম্মৎ হালিমা খাতুন চৌধুরী।
তিনি ঢাকা মাদরাসা-ই-আলীয়া থেকে ফাজিল পাস করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রথম সাধারণ সম্পাদক।
তিনি ১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুজিব বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে পাকিস্তানী বাহিনীর গুলিতে তার একটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন।
১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ড সংঘটিত হলে তিনি দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান ও ৪ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ২ বছর কারাবরণ করেন এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান।
১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অফিসারদের নিয়ে গঠিত জনতার মঞ্চের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু মৃত্যুবরণ করলে এই আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরে তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মোকতাদির চৌধুরী এমপি নবম জাতীয় সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
টানা তিনবার সংসদ সদস্য থাকার সুবাধে তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করেন। বিশেষ করে নব-গঠিত বিজয়নগর উপজেলাকে তিনি ঢেলে সাজিয়েছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ কিছু মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টি.এ.রোডের মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাস নির্মান করে শহরের গত কয়েক যুগের নিত্যদিনের যানজট দূর করেন।
বিজয়নগরের জনগন যাতে সহজে জেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে পারে এজন্য তিনি হাওরের উপর দিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা (শেখ হাসিনা সড়ক) নির্মান করেন। তিতাস নদীর ওপর অকল্পনীয় দুটি ব্রিজ নির্মাণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা থেকে ভাদুঘর পর্যন্ত তিতাস নদীর পশ্চিমপাড়ে বেরিবাঁধ নির্মাণ করেন। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যান।
মোকতাদির চৌধুরী এমপি মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজসহ সমাজ বিরোধীদেরকে নিয়ন্ত্রন করে জনগনের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিশেষ করে তাঁকে বলা হয় নিরাপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনক। এছাড়াও তিনি তৃনমূল পর্যায়ে আওয়াম লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে সু-সংগঠিত করে গড়ে তুলেন।
সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিশাল ভোটের ব্যবধানে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
+ There are no comments
Add yours