ফ্রন্টিয়ার রিপোর্ট :
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-(নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিএনপি থেকে বহিস্কৃত নেতা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের পাশে দাঁড়ালেন ওই আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন নেতাসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
গতকাল শনিবার দিকে সাড়ে পাঁচটার দিকে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ঢাকা থেকে এলাকায় গেলে আওয়ামীলীগ-বিএনপির নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে নাসিরনগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সৈয়দ একে একরামুজ্জামান। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছেন। সেখানে তাকে গ্রহন করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীসহ এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি নাসিরনগর উপজেলা সদরে পৌঁছার পর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কৃষকদল, ছাত্রদলসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তাকে অভ্যর্থনা জানান।
এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের নেতা নাজির মিয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী নাজির মিয়ার স্ত্রী ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রোমা আক্তার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ.টি.এম মনিরুজ্জামান সরকার, উপজেলার ফান্দাউক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুকুজ্জামান ফারুক, সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা শেখ আবদুল আহাদ, উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বুড়িশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল চৌধুরী, গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ শাহীন ও ধরমন্ডল ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা তার পাশে ছিলেন। তাঁরা একরামুজ্জামানকে বরণ করেন। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একরামুজ্জামান উপজেলার কলেজ মাঠে গেলে সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তাকে বরণ করে নেন।
সৈয়দ একে একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য সৈয়দ একরামুজ্জামান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পর গত ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২৯ নভেম্বর নাসিরনগর উপজেলা বিএনপি ও জেলা বিএনপি একরামুজ্জামানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
এ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য বি.এম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএম ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, সৈয়দ একে একরামুজ্জামানসহ ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে একরামুজ্জামানের।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রোমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, আমার স্বামী ও আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিচ্ছি। আমরা তার নির্বাচন করব। একরামুজ্জামান নাসিরনগরে আসলে এলাকার শত শত উৎসুক মানুষ তাকে শুভেচ্ছা জানতে উপস্থিত হন। আমরা লোকজনকে জড়ো হতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তারপরও মানুষের ঢল নেমেছে। কারণ সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবাসেন। দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন করার কারণ জানতে চাইলে তিনি, আমরা তাকে (বর্তমান সংসদ সদস্য) পছন্দ করি না। পাঁচ বছরের নাসিরনগরের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ.টি.এম মনিরুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের জানান, আমি নিজেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। যাচাই-বাছাইয়ে আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। কিন্তু আমার পক্ষের ভোটার ও কর্মী-সমর্থকেরা এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী না হয়ে একরামুজ্জামানের পক্ষে সমর্থন দিয়ে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি ভালো ও জনপ্রিয় মানুষ। তিনি সংসদ সদস্য হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।
উল্লেখ্য, সৈয়দ একে একরামুজ্জামান নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা । তিনি আর.এ.কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর আগে তিনি অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন।
+ There are no comments
Add yours