বিশেষ প্রতিনিধি॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিয়ানশি বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের টাকাসহ স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আজ সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে “ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে” আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হেল্প লাইন কমিউনিটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বায়েজিদ আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, চায়না কোম্পানি তিয়ানশি ও তাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থানীয় কিছু ডিলার এবং ডিস্ট্রিবিউটর চাকরি, ব্যবসা, উদ্যোক্তা তৈরি, বিভিন্ন স্কিলের প্রশিক্ষণ, বিনা খরচে বিদেশ ভ্রমনসহ অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা এবং স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করেছেন। তাদের দ্বারা শহর, গ্রাম ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। কলেজের মেয়েদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তিয়ানশির মাধ্যমে আয় করে বিনামূল্যে দেশ-বিদেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখান। কুমিল্লা নিয়ে তিনদিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্রেইনওয়াশ করানো হয়। পরে শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে রেঙ্ক কিনতে বলে। টাকা না থাকলে পরিবার থেকে স্বর্ণালংকার চুরি করতে উদ্ধুদ্ধ করেন তারা।
টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে কিছু পন্য দিয়ে পরবর্তীতে আর যোগাযোগ রাখে না তারা। প্রতিবাদ করলে উল্টো বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিসহ মেয়েদের সাথে আপত্তিজনক আচরণ করেন।
তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে তারা বিভিন্ন পন্য দিয়ে থাকেন। ৩৫ টাকা দামের মাথা ব্যথা কমানোর যন্ত্র, বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ১৩ হাজার টাকার ব্রেসলাইট, সাড়ে চার হাজার টাকার ডায়াবেটিকসের ওষুধ, সাড়ে তিন হাজার টাকা দামের টি প্যাক, দুই হাজার টাকা দামের ক্যালসিয়াম জিংকের পাউডার, তিন হাজার টাকা দামের গ্যাসট্রিকের ওষুধ, বয়সের ছাপ কমানোর তিন হাজার টাকা দামের ওষুধ ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলার ঘাটিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা নুসরাত জাহান বলেন, স্কুলের পুরোনো এক বন্ধুর সাথে অনেকদিন পর গত নভেম্বর মাসে দেখা। সে আমাকে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে দেড় হাজার টাকা নিয়ে তিয়ানশিতে যেতে বলে। সেখানকার লোকজন সাড়ে চার হাজার টাকা দিতে বলে। পরে দুই দিনের প্রশিক্ষণ দিয়ে বিনিয়োগ করতে বলে। টাকা না থাকায় বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার চুরি করতে বলে। প্রলোভনে পড়ে দুই দফায় মায়ের দুই ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে তাদের একজন সুবর্ণা আক্তারের কাছে দেই। সেখান চেইন, আংটি, এক জোড়া কানের দুলসহ সাত প্রকার জিনিস ছিল। তারা দুই লাখ টাকা মূল্য ধরে আমাকে ২০ হাজার টাকার পণ্য দেয়। সেসব পন্য সবই নকল। পরে বুঝতে পারি আমি প্রতারিত হয়েছি। স্বর্ণ ফেরত চাইলে তারা নানা ধরণের ভয় দেখাচ্ছে। আমি দুই ভরি স্বর্ণ ফেরত চাই।
আরেক ভুক্তভোগী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ইংরেজী সাহিত্যের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সাফা বলেন, স্বাবলম্বী হতে ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। তারা ইসলামী বিষয় তুলে ধরে। লস থেকেই লাভ বলে আশ্বাস দেন। মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করি।
তারা বলেন, তিয়ানশির ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিস্ট্রিবিউটর শরীফুল ইসলাম, সুবর্ণা আক্তার, আশরাফুল ইসলাম মেহেদী, ইকবাল হোসেনসহ ১৮ থেকে ২০জনের নামে তারা সদর থানায় একটি অভিযোগ করেন। টাকা ফেরত চাওয়ায় কোম্পানীর লোকজন ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে তিয়ানশির ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিস্ট্রিবিউটের মার্কেটিং ডেভলপার শরীফুল ইসলাম বলেন, তাদের সাথে সভা করেছি। থানায় অভিযোগ দিয়েছি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের আইনজীবী সমিতির ভবনে সালিশ সভা হয়। প্রতারিত হয়েছেন এমন ৫৮জন ভুক্তভোগীর তালিকা দিলেও তারা কাউকে হাজির করাতে পারেনি ও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারনি। সময় দিলেও তারা আর সালিশে উপস্থিত হয়নি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তারা কোনো টাকা পাবে না।
তিয়ানশি বাংলাদেশ কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

+ There are no comments
Add yours