অন্যকে দান-সদকায় উদ্বুদ্ধ করার ফজিলত

Spread the love


অনলাইন ডেস্ক॥

দান-সদকা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। কিন্তু সবার তো অকাতরে দান করার মতো সামর্থ্য নেই। কিন্তু কারো কারো এমন বন্ধু, বস কিংবা কাছের মানুষ আছে, যে একটি ইচ্ছা করলে বহু অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে পারে। এ ধরনের ধনী ব্যক্তিদের দান-সদকা ও দ্বিনের কাজে আত্মনিয়োগ করার উৎসাহ দিয়েও সমপরিমাণ দান-সদকার সওয়াব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আবু মাসউদ আনসারি (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি বিশ্বনবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, আমার বাহন হালাক হয়ে গেছে, আপনি আমাকে একটি বাহন প্রদান করুন। তিনি বলেন, আমার কাছে তো তা নেই। সে সময় এক ব্যক্তি বলল, আমি এমন এক ব্যক্তির সন্ধান তাকে দিলাম যে তাকে বাহন দিতে পারে। রাসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি কোনো উত্তম বিষয়ে পথপ্রদর্শন করে, তার জন্য আমলকারীর সমান সাওয়াব রয়েছে।

(মুসলিম, হাদিস : ৪৭৪৬)

সুবহানাল্লাহ। হাদিসে উল্লিখিত লোকটি নবীজি (সা.)-এর কাছে বাহনের জন্য আরজ ব্যক্তিকে নিজ খরচে বাহনের ব্যবস্থা করে দেননি, হয়তো তার সেই সামর্থ্যও ছিল না, কিন্তু তিনি তাঁর পরিচিত ধনী কারো কাছ থেকে এই মুজাহিদকে বাহনের ব্যবস্থা করে দিয়ে একটি বাহন ব্যবস্থা করে দেওয়ার সমপরিমাণ সাওয়াব পেয়ে গেলেন। তাই আমাদের পরিচিত মহলে কোনো ধনী লোক থাকলে তাদের দান-সদকায় আগ্রহী করে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে সহায়তা করাও একটি বড় ইবাদত। অনেকে শুধু ইগোর কারণে সুযোগ থাকলেও কারো উপকার করতে চায় না।

আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক ধনী ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান করতে ভালোবাসে। কিন্তু তার আশপাশের দািয়ত্বশীল মানুষ ও হিসাবরক্ষকরা তা পছন্দ করে না। বরং ধনী ব্যক্তিটি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কিছু দিতে চাইলে তারা বিরক্ত হয়, অনেক ক্ষেত্রে দানের অর্থ নিতে আসা ব্যক্তির সঙ্গে অসম্মানমূলক আচরণ করে, যা একদমই উচিত নয়। কারণ কর্মচারী ব্যক্তিটিও মালিকের অনুমতিক্রমে সন্তুষ্টচিত্তে কোনো দুর্নীতির আশ্রয় না নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে সেও ওই দানের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এমনকি ঘরের স্ত্রীও তার স্বামীর সম্পদ থেকে কোনো কিছু দান করলে সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে।

আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, স্ত্রী তার স্বামীর খাদ্যসামগ্রী হতে বিপর্যয়ের উদ্দেশ্য ব্যতীত সদকা করলে সে সদকা করার সাওয়াব পাবে, উপার্জন করার কারণে স্বামীও এর সাওয়াব পাবে এবং কোষাধ্যক্ষও অনুরূপ সাওয়াব পাবে। (বুখারি, হাদিস : ১৪৩৭)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু মুসা (রা.) নবী (সা.) সূত্রে বলেন, যে বিশ্বস্ত মুসলিম কোষাধ্যক্ষ (আপন মালিক কর্তৃক) নির্দেশিত পরিমাণ সদকার সবটুকুই নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে সানন্দচিত্তে আদায় করে, সে কোষাধ্যক্ষও নির্দেশদাতার ন্যায় সদকা দানকারী হিসেবে গণ্য। (বুখারি, হাদিস : ১৪৩৮)

অনেক সময় আবার দেখা যায়, ধনী ব্যক্তির কোনো বিশ্বস্ত মানুষ তাকে দান-সদকায় উদ্বুদ্ধ করলে অন্যরা তার ওপর বিরক্ত হয়, তাদের ধারণা থাকে, এই লোকটির কারণে ওই ধনী ব্যক্তি দরিদ্র হয়ে যাবে। অথচ নবীজি (সা.)-এর হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, ধনী ব্যক্তিকে দান-সদকায় উদ্বুদ্ধ করা ব্যক্তিটি তার পরম বন্ধু। সে এই কাজের মাধ্যমে তাকে দুনিয়া-আখিরাতে মহান আল্লাহর বিশেষ সাহায্যের উপযোগী করে তুলছে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কোনো বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিনে তার থেকে বিপদ দূরীভূত করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্ত লোকের জন্য সহজ ব্যবস্থা (দুর্দশা লাঘব) করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুর্দশা মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার ত্রুটি গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে আল্লাহ ততক্ষণ তার সাহায্যে নিয়োজিত থাকেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৬০৮)

তাই আমাদের সবার উচিত, সাধ্যমতো অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা করা, নিজের সাহায্য করার ক্ষমতা না থাকলেও যদি অন্য কোনো জায়গা থেকে তাকে সাহায্য নিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে সেখান থেকে হলেও তাকে সাহায্য পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours