অনলাইন ডেস্ক॥
এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে গেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে উপভোগ করেন সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। নিপীড়ন, কারাবরণ ও অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন পর সশরীরে কোনো কর্মসূচিতে যোগদান; পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার গুরুত্ব; অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানসহ সরকারের উপদেষ্টাবৃন্দ ও সেনাবাহিনীর উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও অতিথিদের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবারের সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হয়ে উঠেন খালেদা জিয়া। সর্বশেষ ২০১২ সালে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি, তখন ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা। এরপর আর তাকে সেনাকুঞ্জের এ আয়োজনে দেখা যায়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে পৌঁছান খালেদা জিয়া। সেনাকুঞ্জে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানান।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যোগদানের সুযোগ পাওয়ায় আনন্দ ও গর্ববোধ হওয়ার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সেনাকুঞ্জে দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শুরুতেই তিনি খালেদা জিয়াকে স্বাগত এবং অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানান।
ড. ইউনূস বলেন, খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত এবং গর্বিত যে আপনাকে (খালেদা জিয়াকে) এই সুযোগ দিতে পেরেছি। তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও এই বিশেষ দিবসে সবার সঙ্গে শরিক হওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এই অনুষ্ঠানে আপনাকে বিশেষভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। এ সময় খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বিকালে সেনাকুঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যে সম্মান জানানো হয়েছে, তাতে গোটা জাতি আনন্দিত। বেগম খালেদা জিয়া এ দেশে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সময়টা দিয়ে দিয়েছেন গণতন্ত্রে জন্য, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য। ১২ বছর ধরে পরিকল্পিতভাবে সবচেয়ে দেশপ্রেমিক বাহিনী সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীকে তার থেকে দূরে করে রাখা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি আজকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। বিশেষ করে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে যে তিনি আজকে ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) যে সম্মান দেখিয়েছেন, এতে আমরা যেমন কৃতজ্ঞ হয়েছি, একই সঙ্গে গোটা জাতি আজকে আনন্দিত হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, খালেদা জিয়া সেনাকুঞ্জে পৌঁছে তার আসনে বসার পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। আগেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৌঁছান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খালেদা জিয়াকে অনুষ্ঠানে দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন।
সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুগপৎ আন্দোলন শরিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতা, স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা কামাল হোসেনও এসেছিলেন সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে।
তিন তরুণ উপদেষ্টার কুশল বিনিময় : সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যায় বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া লিখেন- ‘আপনাকে এই সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা গর্বিত। সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪।’
পোস্টটিতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মোট তিনটি ছবি আপলোড করেন। এর একটিতে দেখা যায় বেগম খালেদা জিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাশাপাশি বসে আছেন। আরেক ছবিতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সর্বশেষ ছবিতে দেখা যায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন মাহফুজ আলম, আর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও নাহিদ ইসলাম। এ সময় মাহফুজ আলম ও নাহিদ ইসলামকে হাস্যোজ্বল দেখা যায়।
এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির ২৬ নেতাকে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে সেনাকুঞ্জের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা হন। ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান তার সঙ্গে ছিলেন। ‘ফিরোজা’ থেকে নিজের সাদা গাড়িতে করে সেনাবাহিনীর প্রটোকল পাহারায় সেনানিবাসের উদ্দেশে রওনা হন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তার গাড়ির সামনে ছিল মিলিটারি পুলিশের (এমপি) পাইলট কার, পেছনে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাম্বুলেন্স। সূত্র: ইত্তেফাক।
+ There are no comments
Add yours