হারিয়ে যাচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঁশ ও বেতশিল্প

Spread the love

রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস ॥ বাঁশঝাঁড় ছাড়া বাড়ির কথা কল্পনাও কলা যেতোনা। জন্মের পর নাড়ি কাটা থেকে ধরে মৃত্যু পর্যন্ত বাঁশের প্রয়োজনীয়তা গ্রামীণ জনপদে বসবাসরত মানুষের জন্য অপরিহার্য ছিলো। যেখানে গ্রাম সেখানে বাঁশঝাড় এমনটিই ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় বেত বনের ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। কিন্তু কালের বিবর্তনে জনজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প। এক সময় গ্রামীণ জনপদে বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হতো হাজারো পণ্য সামগ্রী। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ কেটে গৃহিণীরা তৈরী করতেন হরেক রকম জিনিস। আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন হাটে বাজারে এসব জিনিস বেচাকেনা হতো রীতিমত। অনেকে এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দরিদ্র পরিবারের অনেকের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিলো এগুলো। আগে বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসের কদর ছিল। চেয়ার, টেবিল, বইয়ের সেলফ, মোড়া, কুলা, ঝুড়ি, ডোল, চাটাই থেকে শুরু করে এমনকি ড্রইং রুমের আসবাবপত্র তৈরিতেও বাঁশ ও বেত প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া মাছ ধরার পলো, হাঁস, মুরগীর খাঁচা, শিশুদের ঘুম পাড়ানোর দোলনা এখনো বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিলো। এখন সচরাচর গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতেও বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি উন্নতমানের খোল, চাটাই, খলুই চোখে পড়ে তবে তা খুব কম। অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, যেখানে তালপাতার হাত পাখারই কদর নেই, সেখানে অন্যগুলো তো পরের কথা। প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সুবিধা যেমন হাত পাখার চাহিদা কমিয়েছে তেমনি মৎস্য শিকার, চাষাবাদ, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সকল ক্ষেত্রেই কমেছে বাঁশ আর বেত জাতীয় হস্তশিল্পের কদর। প্রকৃতপক্ষে বাঁশ বেতের স্থান অনেকটাই প্লাস্টিক সামগ্রী দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া এখন বাঁশ ও বেতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর দামও বেড়ে গেছে। ফলে বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেতের সামগ্রীকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর পেছনের মানুষগুলোকে আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে তাদের পেশাকে বাঁচাতে হবে। অন্যথায় এসব সুন্দর বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বাঁশ ও বেত শিল্পকে বাঁচাতে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours