বিলুপ্তির পথে পালের নাও

Spread the love

রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস ॥
পালের নাও পালের নাও পান খেয়ে যাও, ঘরে আছে ছোট বোন তারে নিয়ে যাও। না এখন আর বোনকে আনন্দ দোবার মতো সেই পালের নাও নেই। ক্রমশ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমার শৈশবে, এই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীতে, মালবাহী বড় বড় পালের নৌকা আমি দেখেছি। এক পালের নাও থেকে ধরে চার পালের নাওয়ে করে পণ্য পরিবহনের দৃশ্য এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ক্রমশ সময়ের বিবর্তন, রূপ হারানো নদ-নদীর করুণ অবস্থা আর যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের ফলে বিলুপ্তির পথে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাল তোলা নৌকা বা পালের নাও। এখন মাঝে মধ্যেই হাতে গোনা দু’একটা পালের নাও চোঁখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। নতুন বধূ শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যাওয়ার জন্য পাল তোলা নৌকার বায়না আর ধরে না। তিতাস, মেঘনানদীবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশির ভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত ছিল নদী আর পালের নাওয়ের সম্পর্ক। দুই থেকে তিন দশক আগেও মেঘনা,তিতাস নদীর নৈসর্গ রূপের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে সারি সারি নৌকা। এসব নৌকায় ছিল রঙিন পাল। নদীর বুক চিরে বয়ে চলা দল বেঁধে মানুষ পাল তোলা নৌকার সে দৃশ্য দেখে চোঁখ জুড়িয়ে আসতো। আর মাঝনদী থেকে ভেসে আসা ভাটিয়ালি গানের সুর শুনে মনে তৃপ্ত হতো মন। এসব নদীকে ঘিরে এক সময় পাল তোলা নৌকা ছিল যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। এপাড় থেকে ওপাড়ের যাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে যেত নৌকা। তবে কালের পরিক্রমায় এসব নৌকা এখন অতীত। এখন নদীতে যেটুকু সময় পানি থাকে বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নৌকা চলাচল করে। তবে পালতোলা নৌকার দেখা মিলে না। এক সময় সাম্পন, কোষা নৌকা, ডিঙিনৌকাসহ বিভিন্ন ধরণের পালের নাওয়ের ব্যবহার ছিল। যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে পালতোলা নৌকা। কদর নেই মাঝি-মাল্লাদেরও। নৌকায় পাল এবং দাঁড়-বৈঠার পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে ডিজেলচালিত ইঞ্জিন। মাঝে মধ্যে দু’একটা পালের নাও এখনো নদ-নদীতে দেখা যায়। পালের নাওকে উপজীব্য করে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন কবিতা, ছড়া, গল্প, গান পালা ইত্যাদি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কবি ও কথাশিল্পী হেলাল উদ্দিন হৃদয় বলেন, পাল তোলা নৌকা ছিল আমাদের আদি বাহন। কিন্তু এখন আর এসব নৌকার কদর নেই। আমার মনে হয় এক সময় পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা ভুলে যাবে, ‘পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও’ ইত্যাদি ছড়া। কবি শৌমিক ছাত্তার বলেন, পালের নাও আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। যদিও এখন তা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, কিছুই করার নেই , সময় সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours