ডেস্ক :
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়ার আগ পর্যন্ত যদি ভারত তাকে সেখানে রাখতে চায়, তাহলে তাকে (হাসিনাকে) চুপ করে থাকতে হবে। ভারতে বসে শেখ হাসিনার দেওয়া রাজনৈতিক মন্তব্যকে বন্ধুসুলভ নয় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত রেখে দিতে চাইলে তাকে চুপ থাকতে হবে যতক্ষণ না বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়। ভারতে তার অবস্থান নিয়ে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কারণ, আমরা তাকে বিচারের আওতায় আনতে চাই। মাঝে মাঝে তিনি কথা বলছেন, যা সমস্যা তৈরি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, সাধারণ মানুষ তাকে ভুলে যেত। কিন্তু ভারতে বসে তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন, যা কারোরই পছন্দ হচ্ছে না।সম্প্রতি দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত হামলার ঘটনা এবং এ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বড় করে উপস্থাপন করার বিষয়টি কেবল একটি অজুহাত।’তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ইসলামপন্থি এবং শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশ আফগানিস্তানে পরিণত হবে—দিল্লীকে এই ধারণারও পরিবর্তন করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মূলত গত ১৩ আগস্ট হাসিনার দেয়া বিবৃতির কথা বোঝাতে চেয়েছেন। সেই বিবৃতিতে বাংলাদেশের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত, চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
ড. ইউনূস বলেন, এটি আমাদের জন্য বা ভারতের জন্য ভালো নয়। এতে অস্বস্তি তৈরি হচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। প্রায় চার সপ্তাহ ধরে তার ভারতে অবস্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা বাড়িয়েছে।
ভারতের প্রতি বাংলাদেশের অবস্থান জানানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ড. ইউনুস বলেন, এটি মৌখিকভাবে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়েছে যে হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সবাই এটা বুঝতে পারছে। আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি একটি অবন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে প্রচার চালাচ্ছেন। এমন নয় যে তিনি স্বাভাবিকভাবে সেখানে গেছেন। গণঅভ্যুত্থান ও জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।’
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের সাথে ঘটে যাওয়া সকল নির্যাতনের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে, নতুবা বাংলাদেশের মানুষ শান্তি পাবে না। তিনি যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে এনে সবার সামনে বিচার করতে হবে।’
৮৪ বছর বয়সী এ নোবেল বিজয়ী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে এই সম্পর্ক উন্নত করতে, যা বর্তমানে নিম্নমুখী।
ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, কিছু চুক্তি যেমন ট্রানজিট এবং আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির পুনরায় পর্যালোচনার দাবি উঠেছে। এটি প্রয়োজনীয় বলে মনে হচ্ছে। আমাদের দেখতে হবে কাগজে কী আছে এবং বাস্তবে কী হচ্ছে। আমি বিশেষভাবে উত্তর দিতে পারছি না। যদি পর্যালোচনার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা প্রশ্ন তুলব।
+ There are no comments
Add yours