অনলাইন ডেস্ক:
বগুড়া জেলা জুড়ে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। কম খরচে বেশি আয়ের আশায় পতিত জমিতে আদা চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। বাড়ির আঙিনা, ছাদ, অনাবাদি ও পতিত জমিসহ বিভিন্ন জায়গায় বস্তায় মাটি ভরে কিংবা টবে আদা চাষ করা হচ্ছে।
কৃষি অফিস বলছে, বস্তায় আদা চাষের খরচ অনেক কম। ৫০ থেকে ৬০ টাকা খরচ করে প্রতি বস্তা থেকে প্রায় ২ থেকে ৫ কেজি আদা পাওয়া যাবে। মসলা এবং ভেষজ ওষুধ হিসেবে আদা ব্যবহার হওয়ায় এর দামও বেশ চড়া। তাই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে বাড়তি লাভের আশায় বস্তায় আদা চাষ শুরু করেছেন অনেকে।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৬ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেছেন এই এলাকার কৃষকরা। সফলতা পেলে ভবিষ্যতে এভাবে আদার চাষের পরিধি আরো বাড়বে।
উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের তালিবপুর, কৃষ্ণপুর, বোয়ালমারী, রহবল গ্রাম ঘুরে দেখে গেছে, কৃষকরা বাড়ির আশপাশে বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এদের মধ্যে তালিবপুর গ্রামের কৃষক রেজ্জাকুল ইসলাম তার বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় সারিবদ্ধভাবে প্রথমবারের মতো ৩ হাজারের বেশি বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তাকে দেখে ওই গ্রামের তাজুল ইসলামও বস্তায় আদার চাষ করেছেন। এসব আদা লাগিয়েছেন এপ্রিল মাসের প্রথম থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।বোয়ালমারী গ্রামের কৃষক মাসুদ মিঞা জানান, আদা চাষে আলাদা জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তা স্থানান্তর করা যায় বলে অতিবৃষ্টি বা বন্যার পানি জমে ফসল নষ্ট হয় না। রোগের আক্রমণও কম হয়। বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত ও ছায়া যুক্ত জায়গা কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করা যায় আদা চাষ করে।
বস্তায় আদার চাষ বিষয়ে কৃষক রেজ্জাকুল ইসলাম জানান, বস্তায় আদা লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যে চারা বের হয়ে দ্রæত বেড়ে উঠছে আদা গাছগুলো। বাড়ির পরিত্যক্ত জমি কাজে লাগিয়ে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। সাড়িবদ্ধভাবে বস্তায় গাছ দেখতে এসে অনেকে মুগ্ধ হচ্ছেন। আদা উত্তোলনের আগ পর্যন্ত প্রতি বস্তায় খরচ হয় মাত্র ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর প্রতিটি বস্তায় ২ থেকে ৫ কেজি আদা উৎপাদন হবে। এতে প্রতি বস্তায় খরচ বাদ দিয়েও একজন কৃষকের আয় হবে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা।
শিবগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুর রহমান জানান, মাটির সঙ্গে গোবর সার, খৈল, ছাইসহ রাসায়নিক সার মিশিয়ে কৃষকরা পতিত জমি কাজে লাগিয়ে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। খুব বেশি শ্রমও দিতে হয় না। সার গোবর ছাড়া একটু খেয়াল ও মাঝে মাঝে পানি দিলেই আদাগাছ টিকে যাবে। এ জন্য তাদেরকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মোজাহিদ সরকার জানান, বস্তায় আদা চাষ করলে বাড়তি ফসলি জমির প্রয়োজন হয় না। বস্তার মাটি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। আমরা কৃষককে আদা চাষে উদ্ধুদ্ধ করছি এবং সহায়তা ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে বস্তায় আদার চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কৃষক বাড়তি আয়ও করতে পারে।
এদিকে, শিবগঞ্জ ছাড়াও বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি, ধুনট ও আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মসলা জাতীয় ফসল আদা চাষ করা হচ্ছে বস্তায়। উপজেলাগুলোতে এই ফসল চাষের পরিধি বাড়াতে ইতোমধ্যেই প্রায় দেড় লাখ বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। উপজেলাগুলোর অনাবাদি, বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার ধার, অফিস-আদালতসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পতিত জায়গা ও পুকুরপাড়ে বস্তায় আদাচাষে কৃষক নতুনভাবে স্বপ্ন দেখছেন। অল্প জায়গায় কম খরচে অধিক লাভের আশায় এবং বছরজুড়ে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক।
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সোহরাব হোসেন জানান, বস্তায় আদা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে তার অফিস সংলগ্ন পতিত জায়গায় প্রায় ১ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এ ফসলটি ছায়াযুক্ত পতিত জায়গায় ভালো হয়। ইতোমধ্যেই এই উপজেলায় ১৮ হাজার বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours