ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করেছে সরকার; ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীরা এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কিনবেন; গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গতবছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল। সেই হিসাবে ঢাকায় এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া যদি ২০ বর্গফুট হয়, তখন ওই গরুর চামড়ার দাম হবে ১২০০ টাকা, ঢাকারবাইরে হবে ১০০০ টাকা। এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে, যা গত বছর ছিল ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা, যা আগের বছর ছিল ১২ থেকে ১৪ টাকা। রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা হয়। সভা শেষে সরকারের তরফে মূল্য নির্ধারণ না করে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব বিবেচনায় দাম ঘোষণার পরামর্শ দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। পরে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মাহিন আহমেদ মাহি চামড়ার মূল্য ঘোষণা করেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “চামড়া কিনবে ট্যানারিওয়ালারা। তারা একটা ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিত করে সেটাই আমাদের পরামর্শ। ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২০ বর্গফুট হয় বলে হিসাব করে পাওয়া গেছে। সেই হিসাবে মূল্য ঠিক করা হয়েছে। “চামড়ার কালেকশন যেন সঠিকভাবে হয়, নির্ধারিত মূল্যে যেন সংগ্রহ করতে পারে। গত কয়েক বছর ধরে ভালো মূল্য পাচ্ছি না। এ মূল্যটা ঘোষণা করা হল, এটা টেনটেটিভ প্রাইস। ট্যারিফ কমিশন একটা ইন্ডিকেটিভ প্রাইস দেয়। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপ করে আমরা একটা ইন্ডিকেটিভ প্রাইস ঠিক করি।” বাণিজ্য সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, “ন্যূনতম যৌক্তিক মূল্য নিয়ে আলোচনা করেছি। বাজারে মূল্য এরচেয়ে কম হবে না। সারা বছর যত চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫৫ ভাগ চামড়া কোবানির ঈদে পাওয়া যায়। সেই হিসাবে কোরবানির ঈদটা চামড়া সংগ্রহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” দেশে ঈদের আগে পর্যাপ্ত পশুর মজুদ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার এক কোটি সাত লাখ পশুর চাহিদা। আর এক কোটি ২৯ লাখ পশুর জোগান রয়েছে। ৫৫ লাখ গরু মহিষ রয়েছে এবার। বাকিটা ছাগল, ভেড়া, উঠ ও দুম্বা। “চামড়া দেশের সম্পদ; অন্যদিকে মসজিদ, এতিমখানার আয়ের বড় একটা অংশ। তাই চামড়ার শতভাগ ব্যবহার যেন নিশ্চিত হয়।” ফিনিশড লেদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, “এতিম ও মাদরাসার হক হল এই চামড়া। এটা একটা জাতীয় সম্পদ। এই দুটি বিষয়ের দিকে সবার লক্ষ্য রাখতে হবে। গরমের এই মওসুমে ৩/৪ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিতে না পারলে ব্যাকটেরিয়া জন্মে চামড়া নষ্ট হয়ে যাবে।” বাংলাদেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার মোটামুটি অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেন, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
+ There are no comments
Add yours