রুদ্র মোহাম্মদ ইদ্রিস॥
ঢাকা থেকে একটু দূরে, নিরিবিলি পরিবেশে থাকার জন্য বাড়ি বানিয়েছেন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শাহ্নাজ মুন্নী এবং কবি সরকার আমিন। খোলামেলা সেই বাড়িতে আসবাবের বাহুল্য নেই, আছে সবুজের ছোঁয়া। বাড়ির নামফলকে লেখা আছে, ‘শাহ্নাজ মুন্নী–সরকার আমিন রচিত প্রশান্তিবাড়ী। সরকার আমিন কবি। পেশাগত পরিচয় বাংলা একাডেমির পরিচালক। শাহ্নাজ মুন্নীও কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক। বেসরকারি টিভি চ্যানেল ‘নিউজ২৪’এর প্রধান বার্তা সম্পাদক। সেই কবে এই দুজন মিলে রচনা করেছেন নিজেদের যূথজীবন। আর এখন রচনা করেছেন ‘প্রশান্তিবাড়ী’। প্রশান্তিবাড়ীতে আছে সুইমিংপুল, দৈর্ঘ্যে ২২ ফুট, প্রস্থে ১৩ ফুট। এর জল নীল। তাঁদের সুইমিংপুলের নাম ভূমধ্যসাগর। সুইমিংপুলের ভেতরই একটি মহুয়াবৃক্ষ। গাছটার বয়স ২০ বছর হলো। প্রশান্তিবাড়ীর শুরুটা ২৩ বছর আগে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নয়াপুরে ১৩ কাঠা জমি কিনেছিলেন মুন্নী–আমিন দম্পতি। ‘একটা টিনের ঘর তৈরি হয় ২০০৫ সালে।
বাড়িতে ঢুকে বাঁ দিকে সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে কৃষ্ণচূড়া। মূল দালানে ঢোকার আগে আগে ছোট গোলাকার ইটের এক চত্বর। যেন হেলিপ্যাড। শ্বেতপাথরে নাম লেখা ‘অনু–প্রবুদ্ধ চত্বর’। এই প্রশান্তিবাড়ীর দূরত্ব ঢাকা থেকে ৪৩ কিলোমিটার। ৩০০ ফুট সড়ক ধরে গেলে কাঞ্চন সেতু পার হয়ে সোজা ভুলতা চৌরাস্তা পেরিয়ে নয়াপুর। এখানে চিনতলা বাজারের ভেতর দিয়ে দেড় কিলোমিটার গেলেই প্রশান্তিবাড়ী। উঠান পেরিয়ে নিচতলায় ঢুকতেই বোঝা যায়, বাড়িটির নির্মাণে খোলামেলা আবহকেই প্রাধান্য দিয়েছেন স্থপতি। বাঁয়ে খাবারঘর। ঘর না বলে খাওয়ার জায়গা বলাই ভালো। সঙ্গে খোলা রান্নাঘর। রান্নাঘরের চৌকাঠ পেরোলে বাইরে একচিলতে সবজিবাগান। টুকটাক টাটকা সবজি ধনেপাতা, লেটুসপাতা, মৌসুমি সবজি বেড়ে ওঠে এই বাগানে। প্রচলিত ভাষায় আমরা যেটাকে ড্রয়িংরুম বা বসার ঘর বলে জানি, প্রশান্তিবাড়ীতে তা মিলনায়তন। নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠার যে কাঠের সিঁড়ি, তার পাশেই অ্যাম্ফিথিয়েটারের আদলে ইটের কয়েকটি ধাপ। সেখানে বসেও আড্ডা জমানো যায়। সরকার আমিন চেয়েছেন, মিলনায়তনে বসার অনুভূতি যেন পান অতিথিরা। নিচতলায় একটা ঘরও আছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে মোফাজ্জল হোসেন অতিথিকক্ষ। আমিন বললেন, ‘মুন্নীর বাবা মোফাজ্জল হোসেন। ১৯৯৩ সালে তারা বিয়ে করেন। আজিমপুরে দুই কামরার ছোট্ট বাসায় শুরু হয় তাদের সংসার। তার শ্বশুর তাঁর একটা ফ্ল্যাটে থাকতে বলেছিলেন। তারা সেখানে থাকেন নি। আজ তাদের নিজেদের বাড়ি হয়েছে। মোফাজ্জল হোসেনের স্মৃতিকে ধরে রাখা হয়েছে এই ঘরের নামকরণে।
নিচতলায় ছোট্ট একটা বাগান। বেশ আলোকিত। এর ছাদ পুরো তিনতলা পর্যন্ত। ছাদে কাঁচ লাগানো বড় গোলাকার ফোকর। সেই ফোকর গলে সূর্যালোক সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে বাগানের ঘাস আর ছোট ছোট গাছে। ইনডোর–আউটডোর যেন মিশে একাকার। সরকার আমিন জানালেন, ‘এটা লিফট বসানোর জায়গা। যাতে লিফট বসানো যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours