অনলাইন ডেস্ক॥
শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম ও নিকলীতে চলছে পুরোদমে বোরো ধান কাটার উৎসব। নির্ধারিত সময়ের আগেই এসব এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ ৮০ শতাংশ পাকলেই ধান কাটার তাগিদ দিয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে আগাম বন্যার আশঙ্কায় ধান পাকলেই কৃষকেরা ধান কেটে ফেলছেন।
কয়েক বছর আগেও বৈশাখ মাসের শুরুতে ধান কাটা হতো না।বৈশাখের মধ্যভাগে বোরো ধান কাটা শুরু হতো। কিন্তু আগান বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করতে এখন চৈত্রের শেষ দিকেই ধান কাটা শুরু হয়।সোমবার করিমগঞ্জ-ইটনার সীমান্তবর্তী হাওরে শ্রমিকদের আগাম জাতের ‘ব্রি- ২৮’ ও হাইব্রিড ‘হীরা’ ধান কাটতে দেখা যায়। এসব ধান খলায় নিয়ে ‘বোমা মেশিনে’ মাড়াই করা হচ্ছে।
করিমগঞ্জের পুরান চামড়া গ্রামের কৃষক শাফায়াত জানান, ৫০ শতাংশ জমির ধান কেটে তিনি খলায় বোমা মেশিনে মাড়াই করেছেন। এবার ফলন হয়েছে ভাল। বৃষ্টি না থাকায় ভালভাবে ধান মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারছেন বলেও জানান তিনি।
করিমগঞ্জ উপজেলার বালিয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আলম জানান, এবার তিনি ব্রি-২৯ ও হীরা আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।
সরেজমিন জেলার ইটনা উপজেলার ছিলনী হাওরসহ বিস্তীর্ণ হাওর এলাকায় শ্রমিকদের ধান কাটতে দেখা যায়। ইটনার বড়িবাড়ি হাওরের কৃষক কাশেম মিয়া বলেন, হাওরে এখন পর্যন্ত পানি না আসায় তারা খুশি। আর কিছুদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে।
সরেজমিন দেখা যায় হাওরের মাঠেই ধান প্রতিমণ ৮২০- ৯০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষকরা। মিঠামইন উপজেলার কৃষক রতন জানান, আর ১৫ দিন পেলে হাওরের সব ধান কাটা হয়ে যাবে।
নিকলীর কৃষক জুয়েল বলেন, নিকলীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধান কাটা হয়েছে। বাকি গুলিও দ্রুত কাটা হয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান জানান, বর্তমানে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে হাওরের সিংহভাগ ধান নির্বিঘ্নে কাটা হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তিনি। কৃষকেরা যেন নির্বিঘ্নে ফসল ঘরে তুলতে পারে এজন্য ১৪১ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জেলার কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এবার কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওরেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৬২০ হেক্টর। ধান কাটতে মিঠামইনে কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার নামানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাওরের ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার জানান, প্রচন্ড গরমের কারণে দ্রুত ধান পেকে যাচ্ছে। বৈশাখের শুরু থেকেই বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কিছু দিনের মধ্যেই সব ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। আপাতত বন্যার পূর্বাভাস নেই বলেও জানান তিনি।
+ There are no comments
Add yours