সরাইল: সারোয়ার হত্যাকাণ্ড: আসামিদের জবানবন্দিতে কিলিং মিশনের লোমহর্ষক বর্ণনা

Spread the love


মাহবুব খান বাবুল:
 
জসিম (৩৭), আল আমিন (৩৩) ও খুন হওয়া সারোয়ার (২৬)। তিনজনই অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের সক্রিয় সদস্য। সম্প্রতি ছিনতাই করা একটি রিকশার টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সারোয়ারের সঙ্গে অপর দুইজনের দ্বন্দ্ব বাধে। ক্ষুব্ধ হয়ে ভাগের টাকা না পেলে সকল ছিনতাইয়ের তথ্য ফাঁস করে দেয়ার হুমকি দেয় সারোয়ার। তাই সাক্ষ্য-প্রমাণ চিরতরে মাটিচাপা দিতেই পরিকল্পিতভাবে সারোয়ারকে হত্যা করেছে জসিম ও আল আমিন। গত শনিবার আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই তথ্য দিয়েছে দুই আসামি। তারা সারোয়ারকে হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বিবরণও দিয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নূরনবী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, তারা তিনজনে মিলেই সরাইলের বিভিন্ন জায়গায় অটোরিকশা ছিনতাই করতো। সম্প্রতি একটি রিকশা চুরির পর বিক্রির টাকার ভাগ- বাটোয়ারা নিয়েই সারোয়ারের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্ব হয়। আর এই দ্বন্দ্বের কারণেই সারোয়ারকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাত করে খুন করেছে আল আমিন ও জসিম।
দায় স্বীকার করে আদালতে এই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে তারা বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নরসিংসার গ্রামের নুরু মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৭) পেশাদার অটোরিকশা চুরি/ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাইয়ের কাজে ভাড়া যায় সে। বিজয়নগরের আল আমিন (৩৩) ও খাঁটিহাতা গ্রামের লাল খাঁ ওরফে সারোয়ার (২৬) একই চক্রের সদস্য। জসিম বর্তমানে সরাইল সদরের সৈয়দটুলা গ্রামের হাফিজটুলায় বসবাস করছে। আল আমিন বড্ডাপাড়ায় হাফিজ উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকে। তারা তিন জনের চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অটোরিকশা চুরি/ছিনতাই করছে। গত দুই মাস আগে তারা সরাইলের রবিন মিয়ার গ্যারেজ থেকে একটি অটোরিকশা চুরি করে। ওই রিকশাটি ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা তিন জনে ভাগ করে নেয়। বাকি ২০ হাজার টাকা জসিম ও আল আমিনের কাছে থেকে যায়। বাকি ২০ হাজার টাকার ভাগ চাই সারোয়ার। দেবো দিচ্ছি বলে সারোয়ারকে ঘুরাতে থাকে জসিমরা। একপর্যায়ে সারোয়ার বাকি টাকার ভাগ দ্রুত না দিলে রিকশা চুরির বিষয়টি ফাঁস করে দিবে বলে আল আমিনকে হুমকি দেয়। তারা ভাবে এক চুরির ঘটনা জানাজানি হলে এই পর্যন্ত যত চুরি/ছিনতাই করেছে সব বেরিয়ে যাবে। আর তখনই চুরি ফাঁস করা রোধে পরিকল্পনা করতে থাকে আল আমিন আর জসিম। শুধু ফাঁস রোধ নয়, তারা চিরদিনের জন্য সাক্ষীকে শেষ করার পরিকল্পনা আঁটে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গত শুক্রবার তারা সারোয়ারকে আল আমিনের বাসায় দাওয়াত করে। রাত ৯টার পর সারোয়ারসহ তিনজন একসঙ্গে অটোরিকশায় করে সরাইলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বড্ডাপাড়ায় আল আমিনের বাসায় খাওয়া শেষ করে হাঁটতে রাস্তায় বের হয়। রাত তখন ১০ টা ২০ মিনিট। তারা তিনজনই নাথপাড়া কামার হাটি এলাকার নির্জন স্থানে। সেখানে বাকি ২০ হাজার টাকার ভাগের কথা বলায় সারোয়ারের সঙ্গে বাক্‌বিতণ্ডায় জড়ায় আল আমিন। একপর্যায়ে পূর্ব-পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে কোমর থেকে ছোরা বের করে আল আমিন সারোয়ারের বুকে হাতে ও পেছনের দিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এ সময় আল আমিনকে সহায়তা করে জসিম। রক্তাক্ত অবস্থায় সারোয়ার মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ছোরাটি জসিমের হাতে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ে আল আমিন। সারোয়ারের আর্তচিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে ঘটনাস্থল থেকে ছোরাসহ জসিমকে আটক করেন। আর সারোয়ারকে নিয়ে যান সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন সারোয়ার আরও আগেই মারা গেছেন। জসিমের দেয়া তথ্যানুসারে ঘটনার রাতেই আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ওরা তিনজনই পেশাদার অটোরিকশা ছিনতাই চক্রের সদস্য। এরা এখানে অতীতে ঘটে যাওয়া একাধিক ছিনতাই ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে প্রশাসন। মূলত চুরি করা রিকশার টাকার বণ্টনের বিরোধেই সারোয়ারকে খুন করেছে আল আমিন আর জসিম। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

About The Author

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours