মোহাম্মদ ইদ্রিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া॥
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র ভার্সেস স্বতন্ত্রে লড়াইয়ের আভাস মিলেছে। বর্তমানে বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা তাদের প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে এলাকার প্রতিটি গ্রামেই দেখা যাচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পোস্টার। হচ্ছে প্রার্থীদের পক্ষে মাইকিং। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী সভা, কর্মী সভা, গনসংযোগ ও উঠান বৈঠক করে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি। এই দুই উপজেলায় রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় রয়েছে ৯টি ইউনিয়ন ও আশুগঞ্জ উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন।
এই সংসদীয় আসনের মোট ভোটার ৪লাখ ১ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে সরাইল উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২লাখ ৬৬ হাজার ৬০৫জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪২ হাজার ৩২৬ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৪ হাজার ২৭৮ জন ও হিজরা ১জন। আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৫ হাজার ৬৯ জন ও মহিলা ভোটার ৬৮ হাজার ৩৯৮ জন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, আওয়ামীলীগ নেতা ও বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারি কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক সদস্য সচিব শাহজাহান আলম সাজু।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার কারনে এই আসনটি মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামীলীগ। পরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজু তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
এই নির্বাচনী আসনে জাতীয় পার্টি, তৃনমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রার্থীরা হলেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূইয়া-(লাঙ্গল প্রতিক), আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মঈন উদ্দিন মঈন (কলার ছড়ি প্রতিক), এই আসনের সাবেক দুইবারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা-(ঈগল প্রতিক), ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী-(মিনার প্রতিক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী মোঃ রাজ্জাক হোসেন-(আম প্রতিক), তৃনমূল বিএনপির প্রার্থী মাইনুল হোসেন তুষার (সোনালী আঁশ প্রতিক) ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী ছৈয়দ জাফরুল কুদ্দুছ (ফুলের মালা প্রতিক)।
ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী আবুল হাসনাত আমিনী-(মিনার প্রতিক) এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে। অপর দিকে তৃনমূল বিএনপির প্রার্থী মাইনুল হোসেন তুষার (সোনালী আঁশ প্রতিক) এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়ার ছেলে।
কাগজে-কলমে এই আসনে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও নির্বাচনী মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মঈন উদ্দিন মঈন (কলার ছড়ি), স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ জিয়াউল হক মৃধা (ঈগল প্রতিক) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূইয়া (লাঙ্গল প্রতিক) ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাকী প্রার্থীদের নির্বাচনী মাঠে তেমন তৎপরতা নেই।
২০২২ সালের ১১ ডিসেম্বরে দলীয় সিদ্ধান্তে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া জাতীয় সংসদ ও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন।
গত ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর ভোর রাতে আবদুস সাত্তার ভূইয়া মারা যান। পরে ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান আলম সাজু প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ও অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। আবারো স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রেজাউলের শ্বশুর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা ও আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ মঈন উদ্দিন মঈন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূইয়া জেলা সদরের বোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা।
আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ মঈন উদ্দিন মঈন আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর গ্রামের বাসিন্দা এবং অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা। এক্ষেত্রে এলাকার ইজম তৈরী হলে পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসাব।
স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার ঈগল প্রতিকের পক্ষে ঘোষনা দিয়ে মাঠে নেমেছেন সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা। গত ২৮ ডিসেম্বর স্থানীয় সুরমা ইন হোটেলে এক সভা করে সরাইল উপজেলা আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধাকে সমর্থন দেন।
এদিকে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর জিয়াউল হক মৃধার পক্ষে দিন-রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
অপর দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের অধিকাংশই স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈনের কলার ছড়ির পক্ষে কাজ করছেন। সরাইল উপজেলায়ও মঈন উদ্দিন মঈনের পক্ষে তার কর্মী-সমর্থকরা কাজ করছেন। শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচনী মাঠে আঞ্চলিকতা কাজ করে তাহলে পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসাব। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন ও অপর প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধার মধ্যে।
এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, আমরা জিয়াউল হক মৃধার ঈগল প্রতিকের পক্ষে কাজ করছি। সরাইলবাসীও ঈগলের পক্ষে কাজ করছে। জয় আমাদের হবেই।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম ওরফে শিউলী আজাদ বলেন, আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ গত ২৮ ডিসেম্বর সভা করে জিয়াউল হক মৃধাকে সমর্থন দিয়েছি। আশা করি জিয়াউল হক মৃধা নির্বাচনে বিজয়ী হবেন।
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী মঈন উদ্দিন মঈন সাংবাদিকদের জানান, তিনি নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। দুই উপজেলাতেই তার জন্য ভোটাররা কাজ করছেন। তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামীলীগের কোন প্রার্থী নেই। ওই আসনে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা যে যার মতো কাজ করছেন।
+ There are no comments
Add yours