ফ্রন্টিয়ার ডেস্ক:
চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে হাজার হাজার গ্যাস সংযোগ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে গ্যাস আইন-২০১০ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ ১৩ ডিসেম্বর বুধবার এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল। অপরদিকে বিবাদী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী আক্তার হামিদ ও নাসির আহমেদ।
রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। সেগুলো হলো: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ছয় সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। ওই কমিটিকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগের তদন্ত এবং এর সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা, ঠিকাদারদের তালিকা তৈরি করে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রায়ে আদালত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট একটি নির্দেশনা জারি করে- যে সমস্ত কর্মকর্তা বা ঠিকাদার অবৈধ গ্যাস সংযোগের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে গ্যাস আইনের ১০, ১২ এবং ১৯ ধারা অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ম্যানেজিং ডাইরেক্টর) যে সকল ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগ প্রতিবেদনে উল্লেখিত হবে তাদের লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশ দেন।
এছাড়া জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। সেখানে বুয়েটের ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনিত একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
উক্ত কমিটি ছয় মাসের মধ্যে ২০১২ সাল থেকে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীরা কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেছে তার পরিমাণ অর্থে নির্ধারণ করবে এবং অর্থ সচিবকে উক্ত অর্থ পাবলিক ডিমান্ড রিকভারী এ্যাক্ট, ১৯১৩ এর বিধান অনুসারে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী ভোক্তাদের নিকট হতে অর্থ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামের অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিষয়ে তদন্ত করে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে এই মামলাটি চলমান (Continuing Mandamus) হিসেবে রেখেছেন আদালত।
মামলার বিবরণে জানা যায়, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার অবৈধভাবে হাজার হাজার গ্যাস সংযোগ দিয়ে দুর্নীতি করা হচ্ছে মর্মে সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটে জালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, তিতাস গ্যাসের মহাপরিচালক এবং দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ৮ নভেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। দীর্ঘদিন পর উক্ত রুলে শুনানি শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহ আদালত রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ওই রুল আংশিক যথাযথ ঘোষণা করে কয়েকটি নির্দেশনা দেন আদালত।
+ There are no comments
Add yours