ফ্রন্টিয়ার রিপোর্ট :
প্রায় ২২ বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলা (সরাইল-আশুগঞ্জ) এর নেতাকর্মীদের হাইকমান্ডের কাছে এটিই ছিল প্রতিবারের নির্বাচনে চাওয়া। দলের মনোনয়ন প্রার্থীরাও এক সুরে বলেছেন- দলের যাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তার জন্যই এক হয়ে কাজ করবেন তারা। সর্বশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনে এখানে দলের প্রার্থী ছিলেন আবদুল হালিম। আর ৭৩ সালের পর থেকেই আসনটি হাতছাড়া আওয়ামী লীগের। এবার দলের প্রার্থী পেলেও কী হবে ফলাফল? এ নিয়েই আলোচনা সর্বত্র। যদিও এরইমধ্যে চাউর হয়েছে মনোনয়ন বিমুখ অনেকে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতায় নেমেছেন। প্রকাশ্যে নৌকার মঞ্চে থাকলেও আড়ালে খেলছেন অন্য খেলা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে টাকা পয়সা দিয়েও সহযোগিতা করছেন কেউ কেউ। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, আগামী নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এই উপনির্বাচনে জয়ের ওপরই নির্ভর করবে আগামীতে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতে থাকবে নাকি আগের মতো শরিক অন্য কোনো দলকে ছেড়ে দেয়া হবে।
ফলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কাছে এদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচন।
এবার উপনির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১৬ জন। এরমধ্যে নির্বাচনী মাঠে অনেককে দেখা গেলেও অনুপস্থিত ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী মাঈন উদ্দিন মঈন। ওই নির্বাচনে ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। আর ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন উকিল সাত্তার। দলের মনোনয়নে তাকে হতাশ করা হবে না এমন ধারণা ছিল মঈনের। কিন্তু উপনির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে নিজেকে আড়াল করেছেন তিনি। মাঈন উদ্দিন মঈন বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। শাহজাহান সাজু আমার বাসায় এসেছিলেন। আমি তাকে বলেছি আমার দ্বারা তার কোনো ক্ষতি হবে না। সরাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু বলেন, আমরা ১৬ জন মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এরমধ্যে অনেকেই মাঠে নেই। সরাইল আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট নাজমুল হোসেন বলেন, সরাইল থেকে আমরা যারা প্রার্থী ছিলাম সবাই মাঠে ময়দানে ফুলটাইম কাজ করছি। সরাইলে কোনো সমস্যা নেই।
আশুগঞ্জে যারা প্রার্থী ছিলেন তাদের ব্যাপারটা প্রার্থী বলতে পারবেন। আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের বলেন, আমরা মাঠে কাজ করছি। আর মাত্র একদিন পর ৫ই নভেম্বর ভোট গ্রহণ। যদিও ভোটারদের তেমন আগ্রহ নেই এতে। কিন্তু ঘুম হারাম প্রার্থীদের। নির্বাচনে ৫ প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে আলোচনায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যক্ষ ড. শাহজাহান আলম সাজু এবং মহাজোটের সাবেক এমপি স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। ভোটের মাঠে অন্য ৩ প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন জাতীয় পার্টির এডভোকেট আবদুল হামিদ ভাসানী, জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম জুয়েল, এনপিপি’র মো. রাজ্জাক হোসেন। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার মৃত্যুতে শূন্য হয় এ আসন। একাদশ সংসদের মেয়াদকালে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচন হচ্ছে এই আসনটিতে। এবারের নির্বাচনে ব্যতিক্রম হচ্ছে আওয়ামী লীগ নিজ দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। এরআগে ৩ বার মহাজোটকে আসনটি ছেড়ে দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী অধ্যক্ষ ড. শাহজাহান আলম সাজু বলেন- এই আসনে নির্বাচন এখন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সবাই ৫ তারিখের অপেক্ষায় আছে। দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগের এই আসনটি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নৌকার প্রার্থী হিসেবে আমাকে জয়ী করবেন।
আওয়ামী লীগে কোনো বিভেদ নেই। আওয়ামী লীগের এমপি না থাকায় উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে এ আসনের মানুষ। নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় তাদের মধ্যে কষ্ট ছিল। আমার যিনি প্রতিপক্ষ তাকে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে আমরাই বিজয়ী করেছিলাম। তিনি দুইবার এমপি ছিলেন। বলার মতো কোনো অর্জন নেই তার। এমপি হিসেবে এর আগে যারা ছিলেন তারা আসলে কেউই নাগরিক সুবিধার জন্য কোনো কাজ করতে পারেননি। সে কারণে দলমত নির্বিশেষে সবাই নৌকা প্রতীকে ভোট দেবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মহাজোট থেকে দু’বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা জিয়াউল হক মৃধা। কলারছড়ি প্রতীকে লড়ছেন তিনি। তিনি বলেন- নির্বাচনে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। নির্বাচন জনগণের জন্য উৎসব। মহাজোটের এমপি ছিলাম দু’বার। কয়েকদিনের জন্য হলেও এই নির্বাচন আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন আমার পরবর্তী নির্বাচনের ফাউন্ডেশন হিসেবে কাজ করবে। আমার পক্ষে দুই উপজেলাতেই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতার পর আমার আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে আর কোনো এমপি তা করতে পারেনি। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম বলেন- ব্যালট পেপারসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পেয়েছি। ৫ তারিখ সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
+ There are no comments
Add yours